
প্রকাশিত: Fri, May 26, 2023 8:53 AM আপডেট: Sat, Jun 28, 2025 11:39 AM
সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ
আমেরিকা একটা আইন অমান্যকারী দেশ, তারা যখন আইনের কথা বলে স্যাংশন দেয়, বুঝতে হবে এখানে তাদের রাজনৈতিক ও জাতীয় স্বার্থটাই মুখ্য
ভূঁইয়া আশিক রহমান: আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেছেন, আমরা যদি আমেরিকার ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইটে যাই, তাহলে দেখবো সেখানে লেখা আছে-স্যাংশন দেওয়া হয় মূলত তাদের ফরেন পলিসি ও ন্যাশনাল সিকিউরিটি অবজেক্টিভসের কারণে। কিন্তু সেখানে সরাসরি বলা হয় না, গণতন্ত্র হলো অবজেক্টিভস। বলা হয়েছে, ফরেন পলিসি অবকেক্টিভস। ফরেন পলিসি তো যেকোনো দেশের জন্যই হতে পারে। বলা হয়, মানবাধিকার লংঘনের কারণে স্যাংশন হয়েছে, কিন্তু ওই ওয়েবসাইটে এ ধরনের কোনো বাক্য লেখা নেই।
আমাদের নতুন সময়কে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ বলেন, কোনো কোনো দেশে গণতন্ত্র বলতে গেলে একেবারেই নেই। উদাহরণ হতে পারে পাকিস্তান। কিন্তু পাকিস্তানকে আমেরিকা একবারই স্যাংশন দিয়েছিলো যখন দেশটি নিউক্লিয়ার বোমা ফিস্ফোরণ করেছিলো। ভারতকেও তখন স্যাংশন দিয়েছিলো। যদিও একবছর পরই স্যাংশন তুলে নিয়েছিলো।
বিশে^ অনেক দেশ আছে, যাদের গণতন্ত্রের কাঠামো নেই, কিন্তু সেখানে আমেরিকা স্যাংশন দিচ্ছে না। আবার মানবাধিকারের কথা বললে, বিশে^ মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা এমন দেশের মধ্যে ইসরায়েল অন্যতম। ইসরায়েলের নাম চলেই আসবে। তাদের নিয়ে বিশে^ বড় ধরনের সমালোচনা আছে। এমনকি পশ্চিমা দেশগুলোতেও ইসরায়েলের বড় ধরনের সমালোচনা হয়। কিন্তু সেখানে আমেরিকা কোনো স্যাংশন দিচ্ছে না। তাহলে তারা স্যাংশন দিচ্ছে কোথায়? চীন, না হয় রাশিয়া অথবা ভেনিজুয়েলা, কিউবা, ইরান, উত্তর কোরিয়া। এসব সিদ্ধান্ত দেখে বোঝা যায় আমেরিকা যেখানে ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থ দেখে বা যেখানে তারা কোনোভাবেই সুযোগ তৈরি করতে পারে না, সেখানেই স্যাংশন দেয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ওপর আরোপিত স্যাংশন মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের কারণে নাকি রাজনৈতিক কারণে সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। আমাদের রাজনীতিতে যেহেতু একটা ঘাটতি ও বিভাজন, সমালোচনা আছে, আমেরিকা সেই সুযোগটা নিয়েছে এবং এই স্যাংশনের ফলে কোনোকিছুর সমাধান তারা করেননি বরং বিভাজন বাড়িয়েছেন।
আদর্শ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার পূর্বশর্ত বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা তৈরি করা। আমেরিকার আরোপিত স্যাংশন ক্ষমতাসীন দল স্বাভাবিকভাবেই ভালোভাবে গ্রহণ করেনি এবং বিরোধীদলগুলো খুব উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠার কারণে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনাস্থা ও বিভাজন বেড়েছে। এই বিভাজনের লাভটা কার হচ্ছে, সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার। আমাদের মানবাধিকার ও গণতন্ত্রে যে ঘাটতি সেটা আমেরিকার স্যাংশনের ফলে ঠিক হয়ে যাবে না, আমাদেরই সমাধান করতে হবে।
ড. ইমতিয়াজ বলেন, আমেরিকা যে স্যাংশন দিচ্ছে, এটা তাদের নিজস্ব আইন অনুযায়ী দিচ্ছে, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী নয়। তারা সুপারপাওয়ার, চাইলেই স্যাংশন দিতে পারে, কিন্তু তারা যে কারণগুলো দেখিয়ে স্যাংশন দিচ্ছে, সেটা খুবই বিস্ময়কর! বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড শূন্যের কোঠায় আনতে হবে, এটা নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই, কিন্তু আমেরিকায় ১ বছরে যে পরিমাণ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়, বাংলাদেশ তার ধারেকাছেও নেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে আমেরিকা যতোগুলো যুদ্ধ করেছে, এর মধ্যে একমাত্র জাতিসংঘের সহায়তায় কোরিয়া যুদ্ধ ছাড়া ভিয়েতনাম, ইরাক, কুয়েত, আফগানিস্তানসহ যতোগুলো যুদ্ধ করেছে, কোনোটিই আইনসিদ্ধ নয়। এরকম একটা আইন অমান্যকারী দেশ যখন আইনের কথা বলে, নিয়মের কথা বলে স্যাংশন দেয়, বুঝতে হবে এখানে তাদের রাজনৈতিক ও জাতীয় স্বার্থটাই মুখ্য।
আমাদের মধ্যেই প্রচুর লোক আছে যারা মনে, চিন্তায়,ভাবনায় একেবারে আমেরিকার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমাদের যে এলিট আছে, মনে রাখতে হবে তাদের একটা বড় সংখ্যা, যাদের মাইন্ডসেট একেবারে আমেরিকার সঙ্গে লাগানো এবং স্যাংশনে আমাদের এলিটদের একটা ভূমিকা আছে। কারণ স্বাভাবিকভাবেই আমেরিকা নিজে খোঁজখবর নিয়ে স্যাংশনের মতো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলে আমার মনে হয় না।
আমেরিকার সঙ্গে আমাদের এলিটদের সম্পর্ক গড়ে তোলার ফলে যেটা হয়েছে, বাংলাদেশে আমেরিকার একটা স্পেস তৈরি হয়েছে, যেটা এখন তারা খুব সহজেই কাজে লাগাতে পারে। যখনই প্রয়োজন পড়ে আমেরিকা নিজের স্বার্থে এটাকে ব্যবহার করতে পারে। কারণ আমাদের তো বিভিন্ন জায়গায় ঘাটতি আছেই। এই ঘাটতি শুধু বাংলাদেশেরই নয়, আমেরিকার গণতন্ত্রেও আছে। আমরা ট্রাম্পের নির্বাচনকে দেখি, তিনি এখনো জো বাইডেনকে মেনে নেননি। ক্যাপিটল হিলের আক্রমণ তো টাটকা। এই যে আমেরিকার গণতান্ত্রিক সমস্যা, এটা কি বাইরে থেকে গিয়ে কেউ সমাধান করতে পারবে? উত্তর হবে, ‘একেবারেই না’।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ করে যে দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ স্থাপন করেছে, তাতে আমেরিকাকে চিন্তিত করে তুলছে যে, বিশ^ যেহেতু একটা মাল্টিপোলার হয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ ওই অবস্থান নেই, আমেরিকা যদি স্যাংশন বাড়াতেই থাকে, তাহলে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ অন্য দেশের দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে। আমার মনে হয়, এই ভয়টা আমেরিকার মধ্যে কাজ করছে।
আমেরিকা যখনই কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে, তাতে দেশের মধ্যে বিভাজন বাড়াচ্ছে। ডিভাইড এন্ড রুলের কাঠামোর মধ্যেই থেকে যাচ্ছে। ফলে আমাদের যেটার ওপর জোর দেওয়া দরকার, বিশ^ একটা মাল্টিপোলারের দিকে যাচ্ছে। এই মাল্টিপোলার ওয়ার্ল্ড বা বহুমাত্রিক বিশ^কে থামানোর কোনো উপায় নেই। সব দেশই ধীরে ধীরে জেগে উঠছে।
বহুমাত্রিক বিশে^র সঙ্গে আমাদের ওতোপ্রোত সম্পর্ক গড়ে তোলা দরকার। এটা যতো তাড়াতাড়ি আমরা তৈরি করতে পারবো, আমাদের যতো এলিট এটা বুঝতে পারবেন, এলিটরাও যখন মাল্টিপোলারের সঙ্গে হাত মেলাবে, শুধু একটা দেশের দিকে তাকাবে না, এই যে ছেলেমেরা বিদেশে থাকলেও দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে যেন কাজ করে, সেটা যখন হবে তখন এখনকার মতো কারও স্যাংশনের কোনো ভীতি থাকবে না। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব
আরও সংবাদ
[১]সরকার ধৈর্য্য ধরলেও সন্ত্রাসীরা দেশের অনেক জায়গায় তাণ্ডব চালিয়েছে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী
[১]রাজধানীর মোড়ে মোড়ে আওয়ামী লীগের জমায়েত
[১]আন্দোলনকারীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে এনায়েতপুর থানায় হামলা চালায় [২]সারাদেশে পুলিশের অনেক স্থাপনা আক্রান্ত
[১]সুশাসন নিশ্চিতে রাষ্ট্রকাঠামো ঢেলে সাজানোসহ ১১ দফা দাবি টিআইবি’র
[১]ড. ইউনূসকে ৬৬৬ কোটি টাকা কর পরিশোধ করতে হবে: হাইকোর্ট
[১]রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসসহ নৈরাজ্যকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান: ইকবাল সোবহান চৌধুরী

[১]সরকার ধৈর্য্য ধরলেও সন্ত্রাসীরা দেশের অনেক জায়গায় তাণ্ডব চালিয়েছে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী

[১]রাজধানীর মোড়ে মোড়ে আওয়ামী লীগের জমায়েত

[১]আন্দোলনকারীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে এনায়েতপুর থানায় হামলা চালায় [২]সারাদেশে পুলিশের অনেক স্থাপনা আক্রান্ত

[১]সুশাসন নিশ্চিতে রাষ্ট্রকাঠামো ঢেলে সাজানোসহ ১১ দফা দাবি টিআইবি’র

[১]ড. ইউনূসকে ৬৬৬ কোটি টাকা কর পরিশোধ করতে হবে: হাইকোর্ট
